দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা
আমাদের বঙ্গদেশীয় মুসলিম সমাজে সংসারের পুরুষদের প্রায়ই দেখা যায় ধর্মের দোহাই দিয়ে স্ত্রীকে খাটো করে তারা এক ধরণের পৈশাচিক আনন্দ পান। যদি স্ত্রীর কাছে আত্মসম্মানবোধ নিয়ে থাকতে চান তবে কোরআন হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে স্ত্রীকে খোঁটা দিবেন না প্লিজ। যে সব কাপুরুষ স্ত্রীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নিজেদের সমস্যা মিটিয়ে নিতে পারে না তারাই ঢাল হিসেবে ধর্মকে ব্যবহার করে। আমি সবসময়ই বলি এই বঙ্গদেশে ফেমিনিজমের উত্থানের পেছনে অন্যতম কারণ আমরা পুরুষরাই। আমাদের কথা, কাজ ও আচরণের জন্যই তারা অনেকাংশে ইসলামকে নারীদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে নিয়েছে।
তাদের উপর নানাবিধ জুলুম তো আছেই এমনকি কথায় কথায় ইসলামের নামে খোঁটা দেওয়া অনেক পুরুষের স্বভাব। “নারীদেরকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে”, “জাহান্নামের অধিকাংশ নারী”, “নারীরা স্বামীর প্রতি অধিক অকৃতজ্ঞতা পোষণ করে” এই ধরনের কথাগুলো স্ত্রীকে বলে কখনো খোঁটা দিবেন না, রাগের মাথায় আরো কঠিন ভাবে এগুলো বর্জন করুন। এগুলোর মাধ্যমে নারীদের সৃষ্টিগত প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে মাত্র যেন আমরা পুরুষেরা তাদের সাথে কিভাবে সুন্দরভাবে Deal করতে হয় তা বুঝতে পারি, ভালবেসে মিলেমিশে থাকার স্ট্র্যাটিজি ঠিক করতে পারি। তাদেরকে খোঁটা দেওয়ার জন্য কিংবা তাদের ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করার জন্য এগুলো শেখানো হয়নি।
তাদের উপর নানাবিধ জুলুম তো আছেই এমনকি কথায় কথায় ইসলামের নামে খোঁটা দেওয়া অনেক পুরুষের স্বভাব। “নারীদেরকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে”, “জাহান্নামের অধিকাংশ নারী”, “নারীরা স্বামীর প্রতি অধিক অকৃতজ্ঞতা পোষণ করে” এই ধরনের কথাগুলো স্ত্রীকে বলে কখনো খোঁটা দিবেন না, রাগের মাথায় আরো কঠিন ভাবে এগুলো বর্জন করুন। এগুলোর মাধ্যমে নারীদের সৃষ্টিগত প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে মাত্র যেন আমরা পুরুষেরা তাদের সাথে কিভাবে সুন্দরভাবে Deal করতে হয় তা বুঝতে পারি, ভালবেসে মিলেমিশে থাকার স্ট্র্যাটিজি ঠিক করতে পারি। তাদেরকে খোঁটা দেওয়ার জন্য কিংবা তাদের ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করার জন্য এগুলো শেখানো হয়নি।
এই সংক্রান্ত হাদিস গুলি যিনি আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন সেই রাসূলুল্লাহ (সা) কে দেখুন। তাঁর সমগ্র জীবনে একটিও নজির নেই স্ত্রীকে এসব বলে খোঁটা দেওয়ার। মৃত্যুর সময় তিনি ৯ জন স্ত্রী রেখে গেছেন। কোন একজনও তাঁর ব্যাপারে বিন্দুমাত্র অভিযোগ করেননি বরং আয়েশা (রা) তো সাক্ষ্যই দিয়েছেন যে- “কুরআনই ছিল তাঁর চরিত্র”। আমাদের চরিত্র কি ? আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের স্ত্রীগণ কী সাক্ষ্য দিবে ? আমাদের মা-খালা-চাচী-মামীদের জেনারেশনের অনেকের মধ্যেই একটা কমন কথা শুনবেন- “তোর আব্বার সাথে বনিবনাটা কোনদিন হোল না” কিংবা “তোদের দিকে তাকিয়েই এক সংসারে জীবনটা পার করলাম” ইত্যাদি। আমাদের জীবদ্দশাতেই যদি আমাদের স্ত্রীদের কথা এমন হয় তবে মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগে না।
উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো সমগ্র নারী জাতির সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য (এমন কিছু সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য ছেলেদেরও রয়েছে যেগুলো নারীদের পছন্দ নয়, যেমন- একাধিক নারীর প্রতি সৃষ্টিগত আকর্ষণ। তাই বলে এজন্য কি পুরুষেরা নিন্দার পাত্র হবে? যদি না হয় তবে নারীরাও তাদের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্যের জন্য নিন্দিত হবে না) এগুলো কারো মাঝে কম থাকে, কারো বেশি। এসব উপেক্ষা করুন, দেখেও না দেখার ভান করুন। আপনার কাছে সামান্য ভাল আচরণ পেলেই আপনার স্ত্রী সমস্ত রাগ অভিযোগ ভুলে যাবে- নিশ্চিত থাকুন। তবে শরীয়তের সীমালংঘন করতে দেখলে অবশ্যই উত্তম ও যৌক্তিক উপায়ে বোঝাবেন।
আপনার স্ত্রী যদি আপনার দেওয়া হাত খরচের মুখাপেক্ষী হয় তবে তার এই মুখাপেক্ষীতার হক আদায় করুন। প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তার হাত খরচ দিয়ে দিন। বিশেষ দিবসে অথবা মাসে নির্ধারিত হাত খরচের চেয়ে কিছুটা বাড়িয়ে দিন। যেমন- তার বই পড়ার অভ্যাস থাকলে ফেব্রুয়ারি মাসে অতিরিক্ত কিছু টাকা তার হাতে তুলে দেন। যদি আপনার স্ত্রী গৃহিণী হয় তবে মনে রাখবেন সে আপনার সংসার ও সন্তানের জন্যই তার ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস করেছে। এর উপযুক্ত সম্মান ও মূল্য তাকে দিন। কখনোই এই বলে খোঁটা দিবেন না যে- “বাইরে গিয়ে টাকা কামালে টের পাইতা কত ধানে কত চাল”। বাস্তবতা হলো একদিনের পুরোটা না অন্তত আধা দিন সন্তান-সংসার সামলাতে হলেও কত ধানে কত চাল তা আপনি দ্বিগুণ টের পাবেন।
কারণে অকারণে স্ত্রীর প্রশংসা করুন। সে সাজলেও প্রশংসা করুন, ঘর্মাক্ত থাকলেও করুন। তাকে ভালো লাগলেও করুন, না লাগলেও করুন। মেয়েরা স্বভাবগতভাবেই প্রশংসা পেতে চায়। কতটা পেতে চায় তা অধিকাংশ পুরুষের ধারণারও বাইরে। সব সময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশক কথা বলুন। যেমন- “তুমি না থাকলে সংসারটা এত সুন্দর হতো না”, “তুমি আমার জন্য, বাচ্চাদের জন্য এত করো যে আমি আসলে তোমার কাছে ঋণী” এই ধরনের কথা দৈনিক একবার হলেও বলুন। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলবেন না, একেবারে ডিরেক্ট বলুন। আর প্রতিদিন কমপক্ষে একবার বলবেন যে আপনি তাকে ভালবাসেন। সরাসরি বলতে বলতে না পারলে কিছুক্ষণ হাতটা ধরে বসে থাকুন। তাকে নিশ্চিতভাবে বুঝতে দিন যে আপনি সত্যিই তাকে ভালবাসেন। তবে মৌখিক এক্সপ্রেশন অনেক বড় কাজে দেয়। অনেক সময় ছেলেরা ভাবে- “আরে ও তো জানেই যে আমি কতটা...” জ্বী না। তারা জানলেও সেভাবে ফিল করে না unless you mention it.
শেষ বেলায় একটা কথা বলে বিদায় নিই। সংসার জীবনে একটু খুনসুঁটি, মনোমালিন্য হবেই। তাই বলে রাগের মাথায় ঝগড়ার সময়/পরে আপনার বান্ধবী বা পরিচিত মহলে স্বামীর গীবত করবেন না। বাবা-মার কাছে তো একেবারেই করবেন না। স্বামীর নেগেটিভ দিকগুলো, হোক তা সত্য অথবা মিথ্যা, কাউকে বলে বেড়াবেন না কারণ আপনি যেটাকে ‘বদগুণ’ ভাবছেন সেটা হয়তো তার ক্ষণিকের দুর্বলতা মাত্র। একটা সময় যখন রাগ পড়ে যাবে তখন দেখবেন মানুষটা আসলে অতটা খারাপ নয়। এই কথা ছেলে এবং মেয়ে উভয়কেই বলছি। আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা এই কাজটা করবেন না। কিছু মন্দ গুন তো সব মানুষেরই আছে, আপনাদেরও আছে। কথাটা বিশেষভাবে বোনদের মাথায় রাখা দরকার কারণ তারা সাধারণত অধৈর্য হয়ে স্বামীর গীবত করে বেশি। কথাগুলো শুনলে কষ্ট লাগতে পারে। আপনার মনে হতে পারে- “কই আমি তো এমন না”। হতে পারে আপনি এমন না আবার কিছুটা এমন হতেও পারেন। আর তা না হলেও অন্তত নারীদের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য এমনই। তবে কথাগুলো ভাইদের জন্যও বলব। আপনি স্বামী-স্ত্রী যাই হোন, আপনার বেটার হাফের সম্মান আপনার আমানত। এই আমানতের খিয়ানত করার আগে একটিবারও কি আমরা ভাবতে পারি না ?
লেখকঃ মোঃ রাকিবুল হাসান আকন্দ রাকিব
ছোট নারিচাগাড়ী, বাসুদেবপুর, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা।
মোবাইলঃ +8801772131866