হস্তমৈথুন ও সমকামিতার দুনিয়া ও আখিরাতের মারাত্মক ক্ষতিসমূহ
- সমকামিতা অসংখ্য ইহকালীন ও পরকালীন বিপদের ধারক বাহক ও নিন্দনীয় কাজের কদর্যতা
- কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমানিত। মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেনঃ
ﻭﻟﻮ ﻃﺎ ﺍﺫ ﻗﺎﻝ ﻟﻘﻮﻣﻪ ﺍﺗﺎﺗﻮﻥ ﺍﻟﻔﺎﺣﺸﺔ ﻣﺎﺳﺒﻘﻜﻢ ﺑﻬﺎ ﻣﻦ ﺍﺣﺪ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﻠﻤﻴﻦ – ﺍﻣﻜﻢ ﻟﺘﺎﺗﻮﻥ ﺍﻟﺮﺟﺎﻝ ﺷﻬﻮﺓ ﻣﻨﺪﻭﻥ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ – ﺑﻞ ﺍﻧﺘﻢ ﻗﻮﻡ ﻣﺴﺮﻓﻮﻥ –
অনুবাদ: “এবং লুতকে প্রেরণ করেছ। যখন সে আপন সম্প্রদায়কে বললো, তোমরা কি ওই নির্লজ্জ কাজ করছো, যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বের মধ্যে কেউ করেনি? তোমরাতো পুরুষদের নিকট কাম-তৃপ্তির উদ্দেশ্যে গমন করছো নারীদেরকে ছেড়ে বরং তোমরা সীমালঙ্গন করে গেছো। (সূরা আল আরাফ, আয়াত ৮০-৮১)
লুত ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ এর উম্মতদের উপর সে কারণেই আযাব নাযিল হয়েছিল, যার বর্ণনা পবিত্র কুরআন মাজীদে এ ভাবে প্রদান করা হয়েছে।
ﻓﻠﻤﺎ ﺟﺎﺀ ﺍﻣﺮﻧﺎ ﺟﻌﻠﻨﺎ ﻋﺎﻟﻴﻬﺎ ﺳﺎﻓﻠﻬﺎ ﻭ ﺍﻣﻄﺮﻧﺎ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺣﺠﺎﺭﺓ ﻣﻦ ﺳﺠﻴﻞ – ﻣﻨﻀﻮﺩ –
অনুবাদ: “অতঃপর যখন আমার আদেশ আসলো তখন আমি উক্ত জনপদের উপরিভাগকে নিচের দিকে উল্টিয়ে দিলাম এবং তাদের উপর ক্রমাগত কঙ্কর পাথর বর্ষন করলাম।” (সূরা-হুদ, আয়াত-৮২)
সমকামিতার নিন্দায় রসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বিভিন্ন হাদীসও বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
১। হযরতে সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, চার প্রকারের লোক যারা সকাল বেলায় আল্লাহর আক্রোশে এবং সন্ধ্যাবেলা আল্লাহর অসন্তুষ্টিতে অতিবাহিত করে। রসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রসূল ﷺ এরা কারা? তিনি ইরশাদ করলেন, তারা হল সে সমস্ত পুরুষ যারা মহিলাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বল করে এবং সে সমস্ত মহিলা যারা পুরুষদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে এবং যারা জীবজন্তু ও পুরুষদের সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত হয়। (কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৪৩৯৭৫)
২। হযরতে সায়্যিদুনা আমর বিন আবু আমর ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, যে লূত জাতির কাজ করবে সে মালউন তথা অভিশপ্ত। (তিরমিযী, হাদীস নং- ১৪৬১)
৩। হযরতে সায়্যিদুনা আবু সাঈদ খুদরী ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, শীঘ্রই এ উম্মতদের মধ্যে এমন একদল লোক সৃষ্টি হবে, যাদেরকে লুতিয়া বা সমকামী বলা হবে। এরা তিন ধরনের হয়ে থাকবে।
১। যারা আমরদ তথা সুদর্শন বালকদের দৈহিক গঠন দেখবে এবং তাদের সাথে কথা-বার্তা বলবে।
২। যারা তাদের সাথে করমর্দন ও কোলাকোলি করবে।
৩। যারা তাদের সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত হবে। এরা সকলের উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা তওবা করবে। আল্লাহ তা’আলা তাদের তওবা কবুল করবেন এবং তারা লানত হতে পরিত্রান লাভ করবে। (ঐ, হাদীস নং-১৩১২৯)
১। হযরতে সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, তোমরা যাকে লুত জাতির আমল করতে দেখবে, তাহলে যে করবে এবং যার মাধ্যমে করবে উভয়কে হত্যা করো। (মুস্তাদরাক, হাদীস ন্ং-৮১১৩)
২। হযরতে সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ সমকামীদের শাস্তির ক্ষেত্রে বলেছেন, তাদেরকে এলাকার কোন সুউচ্চ দেয়ালের উপর থেকে নিচে ফেলে দিয়ে তারপর পাথর নিক্ষেপ করে তাদেরকে হত্যা করতে হবে। যেমনিভাবে লুত ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡ এর সম্প্রদায়ের প্রতি করা হয়েছিল।
৩। হযরতে সায়্যিদুনা খালিদ বিন ওয়ালিদ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ হযরতে সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দীক ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর নিকট চিঠির মাধ্যমে জানতে চেয়েছিলেন যে, আমি এখানে এমন এক ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছি, যে নিজকে স্বেচ্ছায় অন্যান্যদের কে ভোগ করতে দেয়। হযরতে সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দীক ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এ ব্যপারে সাহাবায়ে কিরামদের নিকট পরামর্শ চাইলেন। হযরতে সায়্যিদুনা আলী ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ বললেন, নিঃসন্দেহে এটা এমন এক ধরনের গুনাহ যা শুধুমাত্র একটি জাতি তথা লুত জাতি করেছিল, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি সে জাতিকে কি শাস্তি দিয়েছিলেন। সুতরাং আমার পরামর্শ হল, তাকে জ্বালিয়ে ফেলা হোক। অতঃপর হযরত আবু বকর ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ কে লিখেছিলেন, যেন তাকে পুড়িয়ে ফেলা হয়। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ হযরতে সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দীক ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর নির্দেশ মোতাবেক তাকে আগুনে জ্বালিয়ে ফেললেন। (কিতাবুল কবায়ের, পৃ.৬৬)
১। হযরতে সায়্যিদুনা ওকি ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি লুত জাতির আমল করে মৃত্যুবরণ করবে, দাফনের পর তাকে লুত জাতির কবরস্থানে স্থানান্তরিত করা হবে এবং তার হাশরও তাদের সাথে করা হবে।
(কানযুল উম্মাল, ৫/১৩৫)
২। হযরতে সায়্যিদুনা আলী ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অপর ব্যক্তিকে নিজ দেহ ভোগ করতে দেয়, এমনকি অপর ব্যক্তিও সে কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে আল্লাহ তাআলা তাকে নারীর নয়গুন যৌন ক্ষুধা দিয়ে লিপ্ত করে দেবেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা কবরে শয়তানকে তার পাশে রাখবেন। (কিতাবুল কবায়ের, পৃ.৬৬)
৩। বর্ণিত আছে যে, হযরতে সায়্যিদুনা ঈসা ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ তাঁর কোন এক ভ্রমণকালে কোন এক আগুনের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছিলেন, যে আগুন কোন ব্যক্তির উপর জ্বলছিল। তিনি সে আগুন নেভানোর জন্য তাতে পানি ঢাললেন। তিনি দেখতে পেলেন হঠাৎ সে আগুন একজন বালকের রূপ ধারন করে ফেলল। এবং সে লোকটি আগুন হয়ে গেল। এ দৃশ্য দেখে তিনি খুবই অবাক হয়ে পড়লেন এবং তিনি আল্লাহ তাআলার দরবারে ফরিয়াদ করলেন, হে আমার প্রভু! আপনি তারা উভয়কে তাদের পার্থিব অবস্থায় ফিরিয়ে দিন যাতে আমি তাদের কে তাদের ব্যাপার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে পারি। অতঃপর আল্লাহ তাদের উভয়কে জীবিত করে দিলেন। তিনি দেখতে পেলেন, তারা একজন পুরুষ ও একজন বালক। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের উভয়ের ব্যাপারটা কি? পুরুষটি জবাব দিল, হে রূহুল্লাহ! আমি দুনিয়াতে এ বালকটির ভালবাসায় বন্দী হয়ে পড়েছিলাম। রিপুর তাড়না আমাকে এই বালকটির সাথে অবৈধকাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করেছিল, ফলে আমি তার সাথে অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছিলাম। অতঃপর আমরা যখন মৃত্যু বরণ করলাম, তখন এই বালকটি আগুন হয়ে আমাকে দহন করছে এবং আমিও আগুন হয়ে তাকে দহন করছি। আমাদের এ শাস্তি ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। (কিতাবুল কাবায়ের, পৃ.৬৬)
এ কাজও শরীআত কর্তৃক কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও শরীআতের নিকট খুবই অপছন্দনীয়। সারওয়ারে আলম, নূরে মুজাসসাম (নূরের দেহ বিশিষ্ট), শাহে বনী আদম ﷺ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হস্তমৈথুন করবে সে অভিশপ্ত।
(ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যাহ, ১০ খন্ড, পৃ.৮০)
মুফতী শাহ আহমদ রযা খাঁন ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ তাঁর সুবিশাল ফতোয়ার গ্রন্থে হস্ত মৈথুন সম্পর্কে লিখেছেন, এ কাজ অপবিত্র, হারাম ও নাজায়িয। (ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যাহ, ১০ম খন্ড, পৃ.৮০)
রসূল ﷺ হতে হস্ত মৈথুন কারীর কঠোর শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছেঃ
১। আল্লামা শামশুদ্দিন যাহবী বর্ণনা করেন, রহমতে আলম ﷺ ইরশাদ করেছেন, সাত প্রকারের লোকের প্রতি আল্লাহ লানত প্রদান করেছেন, কিয়ামত দিবসে তিনি তাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টিও নিবদ্ধ করবেন না এবং তিনি তাদেরকে বলবেন, তোমরা জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করো, যদি তারা তওবা না করে মৃত্যুবরণ করে। সে সাত প্রকারের লোক হলঃ
১। অবৈধ কাজে লিপ্ত ব্যক্তি,
২। জীবজন্তুর সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত ব্যক্তি,
৩। মা ও মেয়েকে এক সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধকারী ব্যক্তি,
৪। হস্তমৈথুন কারী ব্যক্তি,
(কিতাবুল কবায়ের, পৃ.৬৩)
(বাকি তিনটি যে বইটি থেকে টাইপ করছি সেটাতে টাইপি মিসিং-এডমিন)
২। আল্লামা মাহমুদ আলুসী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ তাঁর তাফসির রুহুল মায়ানীতে লিখেছেন, হযরতে সায়্যিদুনা আতা ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনেছি কিয়ামত দিবসে একদল লোককে হাশরের ময়দানে এমন অবস্থায় উপস্থিত করা হবে যে, তাদের হস্ত সমূহ গর্ভবতী থাকবে। তিনি বলেন, আমার মনে হয় তারা হবে সে সমস্ত লোক যারা নিজ হস্তে গোসল ওয়াজিব করতো অর্থাৎ হস্ত মৈথুন করত।তিনি আরো লিখেছেন, হযরতে সায়্যিদুনা সাঈদ বিন জুবায়ের ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ বর্ণিত, তিনি ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা এমন এক সম্প্রদায়কে আজাবে লিপ্ত করিয়েছেন, যারা নিজেদের লজ্জাস্থানকে অবৈধ পন্থায় ব্যবহার করেছিল। (রুহুল মায়ানী, সূরা আল মুমিনুন, আয়াত-০৩)
গুনাহের এ ধ্বংসাত্মক নগ্নতা, অশ্লীলতা ও উলঙ্গপনার এ প্রলয়ঙ্করী ঘুর্ণিঝড়ের বিকাশ ঘটে সহশিক্ষা, জীবনযাত্রার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও সংমিশ্রন, টি.ভি, ভি.সি.আর ইত্যাদিতে ফ্লিম, নাটক, সিনেমা ইত্যাদির যৌন উত্তেজনামূলক দৃশ্যাবলী পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন সাময়িকীর যৌন নিবেদন মূলক প্রবন্ধ ইত্যাদি থেকে। যা বর্তমান যুগের যুবকদের দেউলিয়াতে পরিণত করেছে। আরবীতে প্রবাদ আছে ﺍﻟﺸﺒﺎﺏ ﺷﻌﺒﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻨﻮﻥ অর্থাৎ যৌবনকাল পাগলামীর একটি স্তর।
বর্তমান যুগের যুবকদের জন্য শয়তান তার বেষ্টনী এতই উন্মুক্ত করে দিয়েছে যে, প্রকাশ্যভাবে সে যত বড় নামাযী কিংবা সুন্নাতের অনুসারীই হোক না কেন, সে তার যৌন তৃপ্তি মেটানোর জন্য কিংবা শাহওয়াতের প্রশান্তির জন্য পাগলপ্রায় হয়ে ঘুরছে। তার পরিবার সামাজিক গলৎ রসম ও রেওয়াজের বশীভুত হয়ে তার বিবাহের ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার উপর পরীক্ষার উপর পরীক্ষা চলছে। কিন্তু এ মহা পরীক্ষাতে ঘাবড়ালে চলবেনা। এবং ঘাবড়ানো কোন পুরুষের স্বভাবও নয়। ধৈর্য্যধারণ করে সাওয়াব অর্জন করা চাই। যৌন উত্তেজনা যতই তীব্র আকার ধারণ করুক না কেন, ধৈর্য্যও ততবেশী ধারণ করে সাওয়াবও বেশী বেশী অর্জন করতে হবে। আর যদি যৌন উত্তেজনাতে পরাস্ত হয়ে তা মেটানোর জন্য অবৈধ পন্থা অবলম্বন করা হয়, তাহলে উভয় জাহানে ক্ষতি ছাড়া আর কিছু নেই এবং তার জন্য জাহান্নামই অবধারিত। হযরতে সায়্যিদুনা আবু দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, “ক্ষনিকের জন্য শাহওয়াতের অনুসরন দীর্ঘ অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়”।
এ লিখাটি লিখার সময় কলিজা কম্পন করে, আর লজ্জায় হাত থেকে কলম পড়ে যায়। কিন্তু আমার এ আবেদন নিবেদন সমূহকে অশালীনতা ও উলঙ্গপনা বলা যাবে না। বরং ইহা মূলত: শালীনতারই শিক্ষা। “আল্লাহ অবশ্যই দেখছেন” এ বিশ্বাস থাকার পরও যে সমস্ত লোক তাদের ফাসেদ ধারনা মতে গোপনে নির্লজ্জতার কাজ করে, আমার এ লিখা তাদের জন্য লজ্জার পয়গাম স্বরূপ। হায়! ঘুনে ধরা মস্তিষ্কের অধিকারী কতিপয় যুবক যুবতী, বিবাহের রাস্তা বন্ধ দেখে নিজেদের হাত দ্বারা স্বীয় যৌবনকে নষ্ট করতে আজ দ্বিধা করছেনা। প্রথমে প্রথমে যদিও সে কাজ তৃপ্তিদায়ক মনে হয়, কিন্তু যখন চোখ খুলে যায়, তখন তা আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। স্মরণ রাখবেন! এ কাজ হারাম ও কবীরা গুনাহ। হাদীস শরীফে হস্ত মৈথুন কারীকে মালউন বলা হয়েছে এবং তার জন্য রয়েছে পরকালে জাহান্নামের বেদনাদায়ক শাস্তি। এ কাজে পরকালও তার নষ্ট হয়ে গেল এবং ইহকালেও তার জন্য রয়েছে প্রচুর ক্ষতি। এ স্বভাবগত অভ্যাস দ্বারা স্বাস্থ্যও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। একবার সে কাজ করার পর পুনরায় তা আবার করতে ইচ্ছে হয়। আল্লাহর পানাহ! কয়েকবার সে কাজ করলে পুরুষাঙ্গে ফুলা চলে আসে এবং সে অঙ্গের নরম ও সূক্ষ্ম রগসমূহ ঘর্ষনে ঢিলে হয়ে যায় এবং পুরুষাঙ্গ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। অবশেষে অবস্থা এ পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় যে, কোন নারীর প্রতি সামান্য কুদৃষ্টিপাত করলে, কিংবা নারীর কথা মনে কল্পনা করলে সাথে সাথে বীর্য বের হয়ে পড়ে। এমনকি কাপড়ের সাথে পুরুষাঙ্গ সংঘর্ষ হলেও বীর্য বের হয়ে পড়ে। বীর্য সে রক্ত থেকে সৃষ্টি হয়, যা সমস্ত শরীরে খাদ্য পৌঁছানোর পর অবশিষ্ট থাকে। যখন প্রচুর পরিমানে বীর্য নির্গত হতে থাকবে তখন রক্ত সমস্ত শরীরে কিভাবে খাদ্য পৌঁছবে? ফলশ্রুতিতে শরীরের যাবতীয় কার্যক্রম লন্ডভন্ড হয়ে পড়বে।
১। মন দুর্বল হয়ে পড়ে।
২। পাকস্থলী,
৩। যকৃত এবং
৪। হৃদপিন্ড নষ্ট হয়ে যায়।
৫। দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়।
৬। কানে শোঁ শোঁ আওয়াজ অনুভূত হয়।
৭। সর্বদা খিটখিটে মেজাজ থাকে।
৮। সকালে ঘুম থেকে উঠলে শরীর কাহিল (ক্লান্ত) হয়ে পড়ে।
৯। শরীরের জোড়ায় জোড়ায় ব্যথা অনুভব হয় এবং চোখে ঝাপসা দেখে।
১০। বীর্য পাতলা হয়ে যাওয়ার কারনে সর্বদা সামান্য সামান্য বীর্য নির্গত হতে থাকে, প্রস্রাবের নালীতে বীর্য জমে থাকে ও দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। ফলে প্রস্রাবের নালীতে ক্ষত হয়ে যায় এবং ক্ষতস্থান হতে পুঁজ বের হয়।
১১। প্রথমে প্রথমে প্রস্রাবের সময় সামান্য জ্বালা যন্ত্রনা অনুভব হয়।
১২। পরবর্তীতে প্রস্রাবের সাথে পুঁজ বের হয়।
১৩। অতঃপর প্রস্রাবের সময় তীব্র জ্বালা যন্ত্রণা সৃষ্টি হয়।
১৪। এমনকি গলোরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনকে এমনই তিক্ত করে তোলে, যার ফলে মানুষ মৃত্যুকে আহ্বান করতে থাকে।
১৫। বীর্য পাতলা হয়ে যাওয়ার কারণে কোন কল্পনা ব্যতীত প্রস্রাবের আগে বা পরে প্রস্রাবের সাথে বীর্য নির্গত হয়। একে প্রমেহ রোগ বলা হয়, যা কঠিন কঠিন রোগ সমূহের মূল।
১৬। অঙ্গ বিকল হয়ে যায়।
১৭। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
১৮। মেরুদন্ড দূর্বল হয়ে পড়ে।
১৯। বিবাহের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে।
২০। যদিও স্ত্রীর সাথে মিলন করার ক্ষেত্রে সফলও হয়, কিন্তু সন্তান সন্তুতি জন্ম নেয় না, ফলে নিঃসন্তান থেকে যায়।
২১। কোমরে ব্যথা অনুভব হয়।
২২। চেহারা হলুদ বর্ণ ধারন করে।
২৩। চোখে গাড়া পড়ে।
২৪। শরীর দিন দিন ক্ষীন হয়ে যায়, স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে।
২৫। টাইফযেড রোগে আক্রান্ত হয়।
২৬। মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে যায়।
(বি.দ্র. উপরে বর্ণিত ২৬টি কারণ হতে সব গুলো যে একজনের একসাথে প্রকাশ পাবে তা নয়। আস্তে আস্তে এগুলোর অধিকাংশই হস্তমৈথুন কারীগনের মাঝে পাওয়া যাবে।)
আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ আহমদ রযা খাঁন ﺭَﺣْﻤَۃُ ﺍﻟﻠّٰﮧِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ এর খেদমতে আরয করা হলো: একব্যক্তি হস্ত মৈথুন করে, সে এই খারাপঅভ্যাস থেকে বিরত থাকে না। প্রত্যেকবার তাকে বুঝানো হয়েছে, এখন আপনি বলুন, তার হাশর কিরূপ হবে এবং তাকে সে অভ্যাস থেকে মুক্তি লাভের জন্য কি দোয়া পড়তে হবে?
আ’লা হযরতের জবাব: সে গুনাহগার ও অপরাধী। সে কাজ বারবার করার কারণে কবীরা গুনাহকারী এবং ফাসিক সাব্যস্ত হবে। হাশরের ময়দানে হস্ত মৈথুনকারীরা গর্ভিত হাত নিয়ে উঠবে। ফলে বিশাল জনসম্মুখে তাদের অপদস্ত হতে হবে। যদি তারা এ কাজ থেকে তাওবা না করে, আর আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছা শাস্তিও দিতে পারেনএবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমাও করে দিতেপারেন। এ অভ্যাস থেকে মুক্তি লাভের জন্য হস্ত মৈথুনকারী ব্যক্তিদের সর্বদা ﻟَﺎ ﺣَﻮْﻝ শরীফ পাঠ করা উচিত। যখন শয়তান তাদের এ খারাপ কাজের প্রতি প্ররোচিত করবে, তখন সাথে সাথেআল্লাহ তাআলার প্রতি ধ্যানমগ্ন হয়ে অধিকহারে ﻟَﺎ ﺣَﻮْﻝ শরীফ পাঠ করবে। সর্বদা পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে। ফযরের নামাযের পর নিয়মিত সূরায়ে ইখলাস পাঠ করবে। ﻭَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﺍَﻋْﻠَﻢُ (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২তম খন্ড, ২৪৪ পৃষ্ঠা)
শাজরায়ে আত্তারীয়্যার ২১ পৃষ্ঠাতে উল্লেখ আছে: যে ব্যক্তি প্রতিদিন ফযরের নামাযের পর এগারবার সূরা ইখলাস পাঠ করবে, শয়তান তার সৈন্যসামন্ত দ্বারা গুনাহ করানোর শত চেষ্টা করলেও তার দ্বারা গুনাহ করাতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজ ইচ্ছায় গুনাহ না করে।
হস্তমৈথুন আরো ক্ষতিকারক দিক সমুহঃ
আল্লাহ তা’আলার দেয়া এ সুন্দর যৌবনকালটাকে ক্ষয় করার জন্য যে ব্যক্তি তার স্বীয় লিঙ্গের পিছনে লেগে যায় এবং নিজ হাত দিয়ে এটা চর্চা করায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তার এ হাত পরকালে সাক্ষী দেবে যে, সে এ পাপ কোথায় কতবার করেছে- যা পবিত্র কালামে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “সেই দিন আমি তাদের মুখের উপর মোহর মেরে দেব, বরং তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে, আর তাদের পা সাক্ষ্য দেবে যা তারা অর্জন করত সে-সন্বন্ধে। ” -(আল- কুরআন, ৩৬:৬৫)
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ “ যে ব্যক্তি স্বীয় জিহ্বা এবং লজ্জাস্থান জামিন হবে আমি তার জাহান্নামের জন্যে জামিন হবো।” -(বুখারি, মিশকাত)
উক্ত হাদিস থেকে প্রমানিত হচ্ছে, মানব দেহের এ দু’টো অঙ্গ অত্যন্ত দুর্বল ও বিপদজনক। এ দু’টো অঙ্গের মাধ্যমে বিশেষ করে লজ্জাস্থানের মাধ্যমে পাপ করাতে শয়তানের জন্য খুব সুবিধা। এ দু’টো অঙ্গের মাধ্যমে বেশীরভাগ পাপ হয়ে থাকে। যদি কোন ব্যক্তি এ দু’টো অঙ্গের হেফাজত করে, বিশেষ করে যুবক লিঙ্গের হেফাজত করে অবয়িদ কোন প্রকারেই বীর্যপাত ঘটাতে চেষ্টা না করে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশের বিরাট সুযোগ পেয়ে যাবে।
অন্যত্র সহীহ হাদীস থেকে আরও প্রমানিত হয়ঃ “{একদা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যুবকদের লক্ষ্য করে বলেন} হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা রাখে, তাদের বিবাহ করা উচিত। কেননা বিবাহ দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। আর যে বিবাহের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা রাখে না, তার উচিত (কামভাব দমনের জন্য) রোযা রাখা।” -(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরও বলেনঃ “তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ তা’আলা নিজের দায়িত্ব মনে করেন।
(১) ঐ খতদাতা ব্যক্তি, যে তার খতের মূল্য পরিশোধের চেষ্টা করে।
(২) সে বিবাহিত যুবক, যে চরিত্রের হিফাজতের উদ্দেশে বিবাহ করে।
(৩) সে মুজাহিদ, যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে।” -।(হাসানঃ আত-তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত)
হস্তমৈথুন এমনই একটি কাজ যার অর্থ নিজেকে কলুষিত করা। এটা একটা জঘন্য কলুষ বা পাপ বোধযুক্ত কাজ। হস্তমৈথুন এমনই গোপনীইয় পাপ যা মানুষ চোরের মত চুপিসারে করে এবং প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরও বলেনঃ “উত্তম চরিত্র হল পু্ন্য। আর যে কাজ তোমার মনে খটকা সৃষ্টি করে এবং লোকের কাছে প্রকাশ হওয়াকে তুমি পছন্দ কর না, তা হল পাপ।” -(মুসলিম, মিশকাত)
অশালীন, অশোভনীয় ও অন্যায় কাজে মনে সঙ্কোচবোধ করার নাম হলো লজ্জা বা হায়া। যার লজ্জা নেই সে পারে হস্তমৈথুনে লিপ্ত হতে। লজ্জা বা হায়া সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ “লজ্জাশীলতা কল্যাণই বয়ে আনে । ” – [বুখারী ও মুসলিম]
মুসলিমের এক বর্ণনায় এরূপ রয়েছেঃ “লজ্জাশীলতার পুরোটাই কল্যাণময়।
ইসলামের দৃষ্টিতে হস্তমৈথুনের খতিকারক দিক সমুহ:
ইসলামের দৃষ্টিতে এটা হারাম এবংকবীরা গুনাহ। শরীয়ত অনুযায়ী যারা
হস্তমৈথুন করে তারা সীমালংগনকারী ।শারীরিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা
হয়েছে।
রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন-“যে ব্যক্তি আমাকে তার দুই চোয়ালের
মধ্যবর্তী জিনিস (জিহ্বার) এবং দুইপায়ের মধ্যবর্তী জিনিস (যৌনাঙ্গের)
নিশ্চয়তা (সঠিক ব্যবহারের) দেবে আমি তার বেহেশতের নিশ্চয়তা দিব । ” –
(বুখারী ও মুসলিম)
পুরুষ হস্তমৈথুন করলে প্রধান যে্সব সমস্যায় ভুগতে পারে তার মধ্যে একটি হলঃ
১} পুরুষ হস্তমৈথুন করতে থাকলে সে
ধীরে ধীরে নপুংসক (Impotent) হয়ে
যায়। অর্থাৎ যৌন সংগম স্থাপন করতে
অক্ষম হয়ে যায় ।
২} আরেকটি সমস্যা হল অকাল
বীর্যপাত। ফলে স্বামী তার স্ত্রীকে
সন্তুষ্ট করতে অক্ষম হয় । বৈবাহিক
সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয় না ।
৩} অকাল বীর্যপাত হলে বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যায় । তখন বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা হয় ২০ মিলিয়নের কম । যার ফলে সন্তান জন্মদানে ব্যর্থতার দেখা দেয়।(যে বীর্য বের হয় সে বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা হয় ৪২ কোটির মত । স্বাস্থ্যবিজ্ঞান মতে কোন পুরুষের থেকে যদি ২০ কোটির কম শুক্রাণু বের হয় তাহলে সে পুরুষ থেকে কোন সন্তান হয়না। )
৪} অতিরিক্ত হস্তমৈথুন পুরুষে যৌনাঙ্গকে দুর্বল করে দেয়। Dr.Liu বলেন –
“There is a huge change in body chemistry when one
masturbates excessively”
আর শরীরের অন্যান্য যেসব ক্ষতি হয়-
১ ) Nervous system, heart, digestive system, urinary system এবং আরো অন্যান্য system ক্ষতিগ্রস্ত হয় । পুরো।শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং শরীর রোগ-বালাইয়ের যাদুঘর হয়ে যায়।
২ ) চোখের ক্ষতি হয়।
৩ ) স্মরণ শক্তি কমে যায়।
৪ ) মাথা ব্যথা হয় ইত্যাদি আরো অনেক
সমস্যা হয় হস্তমৈথুনের কারণে।
৫ ) আরেকটি সমস্যা হল Leakage of semen। অর্থাৎ সামান্য উত্তেজনায় যৌনাঙ্গ থেকে তরল পদার্থ বের হয় । ফলে অনেক মুসলিম ভাই নামায পড়তে পারেন না। মহান আল্লাহ্ তা’ আলার স্মরণ থেকে মুসলিমদের দূরে রাখে হস্তমৈথুন।