অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম ২০২৪
আপনি যদি অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করতে চান, তাহলে জেনে নিন অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম ২০২৪ সম্পর্কে বিস্তারিত।
পিতা মাতার ওয়ারিশ হিসেবে সম্পত্তির মালিকানা পেতে এবং পৈত্রিক ব্যাংক একাউন্ট বা অন্যান্য তহবিলের সুবিধা ভোগ করতেও প্রয়োজন হয় মৃত্যু সনদের। মৃত্যু সনদ জন্ম নিবন্ধন সনদের মতোই একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট। তাই প্রয়োজনের সময় কাজে লাগাতে পরিবারের কারো মৃত্যুর পর অবশ্যই মৃত্যু নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করা উচিত।
মৃত ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন সনদ, মৃত্যু স্থানের ঠিকানা, আবেদনকারীর তথ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করুন। তারপর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আবেদন তথ্য প্রদানের মাধ্যমে তা সংগ্রহ করতে পারবেন। অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম ২০২৪ সম্পর্কেই আজকের বিস্তারিত আলোচনা।
মৃত্যু সনদ এর প্রয়োজনীয়তা
মৃত্যু নিবন্ধন একটি সরকারি ডকুমেন্ট, যা সমাজের প্রতিটি পর্যায়ে মানুষের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সমাজের একজন ব্যক্তির মৃত্যুর নিশ্চিত করে থাকে এবং মৃত্যু বীমা, আইনানুগ সম্পত্তি বিতরণ ইত্যাদি সুবিধা পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মৃত্যুবরন করা পিতা-মাতার উত্তরসূরীদের জন্যে এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্ট হিসেবে পরিগনিত হবে। এই সনদটি:
- পিতা-মাতার ওয়ারিশ হিসেবে কোনো সম্পত্তির মালিকানা পেতে প্রয়োজন হয়।
- বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন ধরনের অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত লেনদেনের ক্ষেত্রে এই সনদ বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয়।
- সরকারি বাজেট প্রণয়ন এবং সংশ্লিষ্ট তহবিল গঠনের ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
- পরিপূর্ণভাবে মৃত্যুবরণ করা পিতা-মাতার ব্যাংক-বীমার সুবিধা ভোগ করা যায়।
- ব্যাংক একাউন্টের অর্থের ভাগ-বন্টন সুষমা হয়।
- কোন নারীর স্বামী মৃত্যুবরণ করলে বিধবা ভাতা পেতেও মৃত্যু সনদ প্রয়োজন হয়।
ইত্যাদি নানা সরকারি ও বেসরকারি কর্মকাণ্ডে মৃত্যু নিবন্ধন সনদ থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
মৃত্যু নিবন্ধন করতে কি কি লাগে
- মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করতে অন্যান্য সরকারি নথিপত্রের মতোই বেশ কিছু সঠিক ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়।
- যে মৃত ব্যক্তির মৃত্যু নিবন্ধন করতে চান তার অনলাইন/ ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- মৃত্যু স্থানের ঠিকানা ও মৃত্যুর সময়ে বাসস্থানের ঠিকানা।
- মৃত্যুর সঠিক তথ্য যাচাইয়ের জন্য প্রমানপত্র।
- মৃত্যুবরনের সঠিক তারিখ।
- মৃত ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা।
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের অথবা জন্ম নিবন্ধন নম্বর।
- যিনি প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করবেন তার জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর। (আবেদনকারী নিজেও হতে পারবে)
উপরোক্ত ডকুমেন্টস গুলো থাকলে পিতা, মাতা, স্বামী, স্ত্রী, কন্যা, পুত্র বা অন্য কেউ আবেদনকারী হয়ে মৃত্যু সনদের জন্য আবেদন করতে পারবে। ডকুমেন্টস সঠিক না হলে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন টি বাতিল হতে পারে।
মৃত্যুর তারিখ ও স্থান সম্পর্কিত প্রমাণপত্র
মৃত্যুর প্রমাণপত্র হিসেবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী বা হাসপাতালে প্রত্যয়ন পত্র। এছাড়াও আপনি নিম্নোক্ত ডকুমেন্টস গুলোর যেকোনো একটি ব্যবহার করতে পারবেন-
- মৃত ব্যক্তির জানাজা আদায়কারী ইমাম কিংবা ভিন্ন ধর্মের ক্ষেত্রে পুরোহিত বা সৎকার সম্পন্নকারী ব্যক্তির প্রত্যয়ন পত্র।
- অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে মৃত ব্যক্তির ময়না তদন্তের সঠিক রিপোর্টের সত্যায়িত কপি।
- দাফন কিংবা সৎকারকৃত স্থানের কেয়ারটেকার কর্তৃক রশিদের কপিও।
- সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ কর্মকর্তা/ পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর কর্তৃক প্রধানকৃত মৃত্যুর প্রত্যয়ন পত্র।
অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম
অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করার জন্য প্রথমে, https://bdris.gov.bd/dr/application – এই লিংকে ভিজিট করুন।
এবার আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে সার্চ করুন। ফলাফল প্রাপ্ত হলে নিবন্ধকের কার্যালয় নির্বাচন করুন। তারপর মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ, মৃত্যু স্থানের ঠিকানা, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা দিন। সর্বশেষ আবেদনকারী সম্পর্কে ও মৃত্যুর বিষয়ে একজন তথ্য প্রদানকারীর তথ্য দিয়ে সাবমিট করুন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা/ সিটি কর্পোরেশন ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে গিয়ে, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয়ে অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন সম্পন্ন হলে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সহ আবেদনের কপি সহ সংশ্লিষ্ট অফিসে জমা দিয়ে মৃত্যু সনদ সংগ্রহ করা যায়।
অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করার জন্য https://bdris.gov.bd/dr/application – এই লিংকে প্রবেশ করে বিস্তারিত ধাপ গুলো অনুসরণ করুন-
ধাপ-১ঃ জন্ম নিবন্ধন দিয়ে তথ্য অনুসন্ধান
মৃত ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে এখানে সার্চ করুন। তথ্য সঠিক হলে মৃত ব্যক্তির ও তার বাবা মায়ের এন্ট্রি আসবে। এবার নির্বাচন করুন বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ-২ঃ নিবন্ধন কার্যালয় সিলেক্ট
আপনি যে ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা/ সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলরের কার্যালয়ে আবেদন করতে চান তা সিলেক্ট করুন।
এখানে- দেশ, বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন অফিস পর্যায়ক্রমে সিলেক্ট করে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ-৩ঃ মৃত ব্যক্তির বিবরণ
এখানে মৃত্যুর সঠিক তারিখ ও মৃত্যুর যেকোনো একটি কারণ নির্বাচন করুন।
পরবর্তী ধাপে মৃত ব্যক্তির স্বামী/স্ত্রীর জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং নাম দিতে পারেন। তবে প্রয়োজন বোধ না হলে না দিলেও চলবে এগুলো অপশনাল।
ধাপ-৪ঃ মৃত্যুর স্থান ও মৃত্যুর সময় বসবাসের ঠিকানা
ব্যক্তি যে ঠিকানায় মৃত্যুবরণ করেন এবং মৃত্যুর সময় উনার বসবাসের ঠিকানা কোথায় ছিল তা লিখুন। এক্ষেত্রে- দেশ, বিভাগ, ডাকঘর, গ্রাম ও সড়ক পর্যায়ক্রমে সিলেক্ট করতে হবে।
মৃত্যু স্থানের ঠিকানা ও মৃত্যুর সময়ে ব্যক্তির বসবাসের ঠিকানা একই হলে মাঝখানে থাকা চেকবক্সে ক্লিক করুন।
ধাপ-৫ঃ আবেদনকারীর তথ্য
এবার আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন নম্বর, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর, নাম, একটি সচল মোবাইল নম্বর দিন। এবং আবেদনকারীর ঠিকানায় দেশ, বিভাগ, ডাকঘর, গ্রাম ও সড়ক পর্যায়ক্রমে সিলেক্ট করে আবেদনকারীর সাথে মৃত ব্যক্তির সম্পর্ক সিলেক্ট করুন।
সর্বশেষ, নিচে একজন তথ্য প্রদানকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র, জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও নাম লিখুন। (আবেদনকারী নিজেও তথ্য প্রদানকারী হতে পারে)
ধাপ-৬ঃ মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন রিভিউ
সকল তথ্য প্রদান করার পর আপনাকে রিভিউয়ের জন্য দেখানো হবে। তথ্য যাচাই করে দেখুন এবং সঠিক হলে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।
আবেদনপত্র সাবমিট করার পর আপনি একটি এপ্লিকেশন আইডি দেখতে পাবেন। এটি অবশ্যই সংরক্ষণ করে রাখবেন অথবা স্ক্রিনশট নিয়ে রাখবেন।
ধাপ-৭ঃ আবেদনপত্র প্রিন্ট
এপ্লিকেশন আইডির পেজে প্রিন্ট অপশন দেখতে পাবেন। আপনার কাছে প্রিন্টার থাকলে “আবেদনপত্র প্রিন্ট” লেখাতে ক্লিক করে প্রিন্ট করে নিতে পারেন। অন্যথায় PDF আকারে সেভ করে রাখতে পারবেন। মোবাইলে আবেদন করলে আবেদনপত্র পেজের স্ক্রিনশট নিয়ে পরবর্তীতে প্রিন্ট করে নিবেন।
উপরোক্ত নিয়মে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন সম্পন্ন হলে অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধন যাচাই করে দেখতে পারবেন আবেদনটি গ্রহণ করা হয়েছে কিনা।
মৃত্যু নিবন্ধন ফি
মৃত্যু নিবন্ধন আবেদনের সরকারি ফি মৃত্যুর বয়সভেদে পরিবর্তিত হয়। যথা-
- মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করলে কোন ফ্রি প্রদান করতে হয় না।
- ৪৫ দিন থেকে ৫ বছর পর্যন্ত আবেদন ফি ২৫ টাকা।
- ৫ বছরের বেশি হলে আবেদন ফি ৫০ টাকা প্রদান করতে হয়।
মৃত্যু সনদ যাচাই ও ডাউনলোড
মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করার পর আবেদনটি গ্রহণ হলে তা যাচাই করতে- everify.bdris.gov.bd লিংকে ভিজিট করুন। তারপর আপনার সামনে একটি যাচাই ফরম আসবে।
এখানে আপনার মৃত্যু নিবন্ধন সনদে প্রদান করা ১৭ ডিজিটের মৃত্যু নিবন্ধন নম্বর লিখুন। তারপর মৃত্যুর তারিখ সঠিকভাবে YYYY-MM-DD ফরম্যাটে প্রথমে বছর তারপরে মাস ও শেষে দিন লিখুন।
তারপর নিচে থাকা ক্যাপচা টি(গাণিতিক সমস্যা) সমাধান করুন। তথ্য সঠিকভাবে দেওয়ার পর search বাটনে ক্লিক করুন। এবার সেই মৃত্যু নিবন্ধনের অনলাইন তথ্য দেখতে পাবেন।
এখান থেকে Ctrl + P ক্লিক করে মৃত্যু নিবন্ধনের অনলাইন কপি প্রিন্ট করতে পারবেন। অথবা PDF আকারে সেভ করে কিংবা স্ক্রিনশট নিয়ে পরবর্তীতে প্রিন্ট করাতে পারবেন।
মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর (FAQ’s)
মৃত্যু নিবন্ধন করতে কি কি লাগে?
অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করতে প্রয়োজন হয়- মৃত ব্যক্তির অনলাইন জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যুর তারিখ ও মৃত্যুর স্থান সম্পর্কিত প্রমাণপত্র, আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন/ জাতীয় পরিচয়পত্র, ঠিকানা ও একটি সচল মোবাইল নম্বর।
মৃত্যু নিবন্ধন করতে কত টাকা লাগে?
মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করলে কোন ফ্রি প্রদান করতে হয় না। ৪৫ দিন থেকে ৫ বছর পর্যন্ত আবেদন ফি ২৫ টাকা। এবং ৫ বছরের বেশি হলে আবেদন ফি ৫০ টাকা প্রদান করতে হয়।
মৃত্যু নিবন্ধন কিভাবে করবো?
মৃত ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ প্রদান করে মৃত্যুর তারিখ ও মৃত্যুর স্থানের তথ্য দিন। তারপর আবেদনকারীর তথ্য দিয়ে অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
মৃত্যু নিবন্ধনের আবেদন পত্রের কপি প্রিন্ট করে ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা/ কাউন্সিলর অফিসে জমা দিয়ে মৃত্যু নিবন্ধন করা যায়।
মৃত্যু নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম কি?
মৃত্যু নিবন্ধন সংশোধন করার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে প্রথমে https://bdris.gov.bd/dr/correction এই লিংকে ভিজিট করে ১৭ সংখ্যার মৃত্যু নিবন্ধন নম্বর ও মৃত্যুর তারিখ দিন। তারপর সাবমিট বাটনে ক্লিক করার পরবর্তী ধাপে মৃত্যু নিবন্ধন সনদ সংশোধন করতে পারবেন।
সর্বশেষ
মৃত্যু নিবন্ধন খুবই প্রয়োজনীয় একটি নথি পত্র। পৈতৃক ওয়ারিশ হিসেবে মালিকানা ও সরকারি অন্যান্য প্রয়োজনেও মৃত্যু সনদের দরকার হয়। তবে অনেকেই দুর্নীতি ও প্রতারণার মাধ্যমে পিতার অন্যান্য ওয়ারিশদের বঞ্চিত করে থাকে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে পরিবারের কেউ মৃত্যুবরণ করলে খুব দ্রুতই মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করে তা সংগ্রহ করুন।
আজকের আলোচনায় জানতে পারলাম- অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম ২০২৪ সম্পর্কে বিস্তারিত। এরকম প্রয়োজনীয় তথ্য ভিত্তিক লেখা পেতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট, ধন্যবাদ।