অর্থাৎ কিভাবে আপনি চাইলে সঠিক উপায়ে নামাজ পড়তে পারবেন? সেই সম্পর্কে জেনে নেওয়ার আগ্রহ অনেকেরি থাকে।
আপনি হয়তো এই সম্পর্কে অবগত আছেন যে, আপনি যদি আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর মত নামাজ পড়তে না পারেন, তাহলে আপনার নামাজ বাতিল হিসেবে গণ্য হবে।
নামাজ পড়ার নিয়ম
আপনি যদি কোনো একটি স্পেসিফিক নামাজ পড়ার নিয়ম শিখে যান, তাহলে প্রত্যেকটি নামাজ আপনি নিজের মনের মত করে করতে পারবেন।
নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের বিধি বিধান রয়েছে। অর্থাৎ এরকম অনেক নামাজ রয়েছে, যেগুলো আপনি একবারে পড়বেন এবং এরকম আরো অনেক নামাজ রয়েছে সেগুলো আপনি অন্য ভাবে পড়বেন।
কিভাবে ফরজ, সুন্নাত এবং নফল নামাজ পড়তে হয়, সেই সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
অযু করে নেয়া
নামাজ পড়ার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম অজু করে নিতে হবে। কারণ, আপনি যদি অজু করে পবিত্র হতে না পারেন, তাহলে আপনার নামাজ কবুল হবে না।
নামাজ কবুল হওয়ার প্রধান শর্ত হলো সঠিকভাবে ওযু করা।
আপনি যদি সঠিকভাবে ওযু করতে চান, তাহলে নিম্নলিখিত ছবির লক্ষ্য রাখতে পারেন, এই ছবিটি দেখে নিলে ওযু করার নিয়মাবলী সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।
উপরে উল্লেখিত ছবিতে যে সমস্ত ইন্সট্রাকশন বর্ণনা করা আছে, সেগুলো যদি আপনি দেখে নেন তাহলে ওযু করার পরিপূর্ণ নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন।
যখনই ওযু করার কাজ পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়ে যাবে, তখন আপনি নামাজ পড়ার জন্য উপযোগী অর্থাৎ এবার আপনি চাইলে নামাজ পড়তে পারেন।
ফরজ, সুন্নাত এবং নফল নামাজের নিয়ম
নামাজ পড়ার শর্ত হিসাবে আরেকট প্রধান শর্ত হলো, সময়মতো নামাজ আদায় করে নেয়া। ওয়াক্তের বাইরে নামাজ আদায়কারীদের প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে দিয়ে বলেন,
কিবলা মুখী হয়ে দাড়ানো
নামাজ পড়ার নিয়ম হিসাবে একদম প্রথম স্টেপ হিসাবে আপনাকে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে। অর্থাৎ কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পশ্চিম দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে গেলে নামাজ পড়তে পারবেন।
তাকবিরে তাহরিমা – এবং হাত বাধা
কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো হয়ে গেলে এবার, তাকবীরে তাহরীমা বা আল্লাহু আকবার বলে দুই হাতকে কানের লতি অফ অবধী উঠিয়ে তারপরে, ডান হাতকে বাম হাতের উপরে রেখে বুকের নিচ থেকে নাভি বরাবর যেকোনো একটি জায়গায় রাখতে পারেন।
বিষয়টিকে ভালোভাবে অনুধাবন করার জন্য নিম্নলিখিত ইমেজ দুইটার দিকে লক্ষ্য রাখতে পারেন।
দোয়া পড়ে নেয়া – ঐচ্ছিক
এবার যখনই তাকবীরে তাহরীমা বা হাত বাধা সম্পন্ন হয়ে যাবে, তখন প্রথমত আপনাকে আপনার দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থানের নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে এবং তারপরে একটি দোয়া পড়ে নিতে হবে।
তেলাওয়াত করা
এবার আপনি যদি জামাতের সাথে নামাজ আদায় করেন তাহলে ইমাম সাহেবের পিছনে, আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম- বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম পড়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারেন।
অর্থাৎ, ইমাম সাহেব যা তেলাওয়াত করবেন সেই তেলাওয়াত শুনতে পারেন।
কিন্তু আপনি যদি নিজে নিজে নামাজ আদায় করেন, তাহলে আপনাকে প্রথমত, সূরা ফাতিহা তেলাওয়াত করে নিতে হবে। এবং তারপরেই সুরের সাথে অন্য আরেকটি সূরা মিলিয়ে নিতে হবে।
সুরা ফাতেহা হলোঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
- আলহামদুলিল্লা-হি রাব্বিল আ-লামীন
- আর রাহমা-নির রাহীম
- মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন
- ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাছতা’ঈন
- ইহদিনাসসিরা-তাল মুছতাকীম
- সিরা-তাল্লাযীনা আন’আম তা’আলাইহিম
- গাইরিল মাগদূ বি’আলাইহীম ওয়ালাদ্দাল্লীন।
যখনই আপনি সুরা ফাতেহা পড়ে নিবেন তখন, সুরা ফাতেহার সাথে অন্য যেকোনো একটি সূরা মিলিয়ে নিতে হবে।
আপনি যে সূরা তেলাওয়াত করবেন সেই সূরার আয়াত যদি বড় হয়ে থাকে, তাহলে একটি আয়াত তেলাওয়াত করলে হয়ে যাবে। আর যদি ছোট হয়ে থাকে তাহলে কমপক্ষে তিনটি আয়াত পড়তে হবে।
রুকু করা এবং রুকু থেকে দাড়িয়ে দোয়া পড়া
যখনই সুরা ফাতেহা এবং তারসাথে একটি সূরা মিলিয়ে নিবেন, তখন তেলাওয়াত করার কাজ শেষ হয়ে গেলে, রুকুতে চলে যেতে হবে।
এবং রুকুতে চলে যাওয়ার পরে কমপক্ষে তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম পড়তে হবে।
বিষয়টিকে ভালোভাবে অনুধাবন করার জন্য নিম্নলিখিত ছবিটি দেখতে পারেন।
যখনই রুকু করার কাজ শেষ হয়ে যাবে, তখন রুকু থেকে দাঁড়াতে হবে। রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় সামি আল্লাহ হুলিমান হামিদাহ বলবে। এবং তারপরে বলবে রাব্বানা লাকাল হামদ।
যদি এখন ইমামের পিছনে নামাজ পড়েন, তাহলে রাব্বানা লাকাল হামদ বলতে হবে।
রুকু থেকে সোজা হয়ে দাড়ানো
যখনই আপনি রুকু থেকে উঠে যাবেন, তখন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন। সোজা হয়ে না দাঁড়ালে নামাজের হক আদায় হবে না।
সোজা হয়ে দাঁড়ানোর করে সরাসরি সিজদায় চলে যাবেন, এবং সিজদায় যাওয়ার পরে অনুরূপভাবে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা তিনবার পড়বেন।
সিজদায় কিছু সময় থাকার পরে পুনরায় সোজা হয়ে বসে পড়বেন এবং তারপরে আবার সিজদা দিবেন। এভাবে দুইটি সিজদা দেয়া হয়ে গেলে, যখন আপনি দাঁড়িয়ে যাবেন তখন প্রথম রাকাত শেষ হয়ে যাবে।
যখনই প্রথম রাকাত নামাজ শেষ হয়ে যাবে, তখন পুনরায় দাঁড়িয়ে যান এবং দাঁড়ানোর পরে আবার পুনরায় রাকাত বা তাকবীরে তাহরীমা বলে পুনরায় হাত বাধতে হবে না। তখন সরাসরি হাত বেধে ফেলতে পারেন।
দ্বিতীয় রাকাত নামাজ পূর্বের মতো একইভাবে পড়বেন পূর্বের মতো যখনই সেজদা করে নিবেন, তখন দ্বিতীয় সেজদাহ করার পরে শেষ বৈঠকে বসবেন। শেষ বৈঠকে বসার পরে, তাশাহুদ তেলাওয়াত করবেন, এবং তারপরে দুরুদে ইব্রাহিম তেলাওয়াত করবেন, এবং সর্বশেষে দোয়া মাসুরা তেলাওয়াত পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবেন।
অবশ্যই মনে রাখবেনঃ
যেকোনো দুই রাকাত বিশিষ্ট সালাত যখন আপনি আদায় করবেন, তখন উপরে উল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী সালাত আদায় করে নিবেন।
তবে আপনি যদি চার রাকাত বিশিষ্ট সালাত আদায় করেন, তাহলে প্রথম দুই রাকাত উপরে উল্লেখিত নিয়মে আদায় করবেন।
এবং যখনই আপনি চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ আদায় করবেন, তখন প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য আরেকটি সূরা মিলিয়ে নিলেও, পরবর্তী দুই রাকাতে শুধুমাত্র সুরা ফাতেহা পড়বেন।
এক্ষেত্রে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য আরেকটি সূরা মিলাতে হবে না।
কিন্তু আপনি যদি সুন্নত নামাজে হিসেবে চার রাকাত সালাত আদায় করেন, তাহলে প্রথম দুই রাকাতে যেভাবে সূরা মিলিয়ে দুই রাকাত শেষ করেছেন, ঠিক একই রকমভাবে পরবর্তী দুই রাকাত সালাত আদায় করবেন।
এছাড়াও চার রাকাত বিশিষ্ট সালাত আদায় করার সময় দ্বিতীয় রাকাতে শুধুমাত্র তাশাহুদ পড়ে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। দরুদে ইব্রাহিম এবং দোয়া মাসুরা পড়তে হবে না।
যখন আপনি চতুর্থ রাকাতে চলে যাবেন, তখন আপনি পুনরায় তাশাহুদ পড়ে এবং তারপরে দুরুদে ইব্রাহিম এবং দোয়া মাসূরা পড়বেন। এবং পরিশেষে সালাম ফিরিয়ে নিবেন।
অর্থাৎ দুই কাধের থেকে দুইবার মুখ করে সালাম ফিরিয়ে নেবেন। প্রথমবার ডান কাঁধের দিকে সালাম ফিরানোর সময়, আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ পড়বেন, তারপরে দ্বিতীয় কাদের দিকে সালাম ফিরানোর সময় আবারো আসসালামু আলাইকুম রাহমাতুল্লাহ পড়বেন।
তাহলে সালাত আদায় করার কাজ শেষ হয়ে যাবে।
তাশাহুদ বাংলা উচ্চারণ সহ
তাশাহুদের অর্থ ও উচ্চারণ:
তাশাহহুদ التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস-সালাওয়াতু ওয়াত-ত্বায়্যিবাতু; আস-সালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ; আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিছ ছালিহীন; আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।
অর্থ : ‘সব মৌখিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবি! আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকত বর্ষিত হোক। শান্তি আমাদের ওপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপর বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো মাবুদ বা উপাস্য নাই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।
দুরুদে ইব্রাহীম, বাংলা উচ্চারণ সহ
দরুদে ইব্রাহিমের আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ-
اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدُ، اَللّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ।
উচ্চারণ:
আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউঅআলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা ইবরা-হীমা অ আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকাহামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউঅ আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা আলা ইবরা-হীমা অ আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
অর্থ:
হে আল্লাহ! তুমি হজরত মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ কর, যেমন তুমি হজরত ইব্রাহিম ও তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত।
হে আল্লাহ! তুমি হজরত মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ কর, যেমন তুমি হজরত ইব্রাহিম ও তাঁর বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত। (বুখারী, মিশকাত)
দুয়া মাসুরা
আরবি :
اللهم إني ظلمت نفسي ظلما كثيرا ولا يغفر الذنوب إلا أنت فاغفرلي مغفرة من عندك وارحمني إنك أنت الغفور الرحيم
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরা । ওয়ালা ইয়াগ ফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা। ফাগফির লি, মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা; ওয়ার হামনি, ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি। আর আপনি ছাড়া গুনাহ ক্ষমাকারী আর কেউ নেই। আপনি নিজ অনুগ্রহে আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি রহম করুন। নিঃসন্দেহে আপনিই ক্ষমাকারী, করুণাময়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৩৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭০৫)
নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে যে তথ্যটি আপনাকে জানিয়ে দেয়া উচিৎ ছিল, সেটি উপায়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
তবে আপনি যদি আরো ভালোভাবে নামাজ শিখতে চান, তাহলে আপনার আশেপাশে কোন একজন বিজ্ঞ আলেমের সহায়তা নিতে পারেন।
এছাড়াও উপরের যেভাবে নামাজ পড়ার নিয়ম বর্নিত হয়েছে, সে অনুযায়ী নামাজ পড়া যেতে পারে।