নোটিশ

রাকিব মাল্টিমিডিয়ার এই পোস্ট টি আপনার ভালো লাগলে শেয়ার করুন এবং অন্যদেরকে এই ওয়েব সাইট টি ভিজিট করার জন্য অনুরোধ করছি। আপনার যেকোনো অভিযোগ সরাসরি জানাতে কল করুন 01772131866 নাম্বারে। ধন্যবাদ ---মো: রাকিবুল হাসান, স্বত্তাধীকারী, রাকিব মাল্টিমিডিয়া
Movies

জিলহজের প্রথম ১০ দিনের আমল



 মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর পবিত্র ঈদুল আজহা যা আরবি মাসের সর্বশেষ মাস জিলহজের ১০ তারিখ পালিত হয়। পবিত্র ঈদুল আজহার দিন মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কুরবানি দিয়ে থাকেন। এদিন আত্মীয়স্বজন ও গরীব দুঃখীদের মাঝে কুরবানির মাংস বিতরণ করা হয়। আর্থিক সামর্থবান মুসল্লিরা মক্কায় হজ পালন করেন। এসময় তারা পবিত্র হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। পবিত্র হজ ও কুরবানি ছাড়াও মুসলমানরা ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ লাভে জিলহজ মাসের ফজিলতপূর্ণ প্রথম ১০ দিন বিভিন্ন নফল ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করে।

পবিত্র কুরআনুল কারিমে বর্ণিত বছরের চারটি সম্মানিত মাসের একটি জিলহজ মাস। মহান আল্লাহ কুরআনুল কারিমে এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস ১২টি- আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত।’ (সুরা তাওবা : ৩৬)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, ওই মাসগুলো হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব।
মাস হিসেবে পবিত্র রমজানুল করিম আর দিন হিসেবে পবিত্র জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন শ্রেষ্ঠ ও সর্বাপেক্ষা মর্যাদাপূর্ণ। পবিত্র কুরআনুল করিমের সুরা হজের ২৮ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তারা আল্লাহর নামের স্মরণ করে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে।’ বিশিষ্ট তাফসিরকার হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, নির্দিষ্ট দিন বলতে এখানে জিলহজ মাসের প্রথম দশককে বোঝানো হয়েছে (ইবনে কাসির)। তাছাড়া সুরা ফাজরের ১-২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘শপথ প্রভাতের। শপথ দশ রাতের। এখানে যে ১০ রাতের কথা বলা হয়েছে, তা হলো জিলহজের প্রথম ১০ রাত।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, চতুর্থ খণ্ড, পৃ. ৫৩৫)। এর মাধ্যমে এ মাসের ১০ দিনের মর্যাদা প্রমাণিত।
পবিত্র জিলহজ মাসটি কুরআনে ঘোষিত হারাম মাসসমূহের মধ্যেও একটি। এ মাসটিতে ইসলাম পূর্ব যুগে যেমন যুদ্ধ-বিগ্রহ, মারামারি, হানাহানির মতো যে কোনো অন্যায়-অকর্মে লিপ্ত হওয়াকে অপরাধ মনে করা হত। ইসলামের আগমনের পরেও এ মাসের সে মর্যাদা ও সম্মান অক্ষুন্ন রয়েছে।
এ মাসের ৮ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত হজের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। আরার এ মাসটিই কুরবানির মাস। আত্মত্যাগ বা কুরবানির এ মাসে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল ও করণীয়।

হজ পালন : জিলহজ মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল ওমরাহ ও হজ। হজ ইসলামের মৌলিক পাঁচ স্তম্ভের একটি। এর মূল কাজগুলো ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে সম্পন্ন করতে হয়। হজ সামর্থ্যবানদের ওপর জীবনে একবার ফরজ হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই গৃহের হজ করা তার জন্য অবশ্যকর্তব্য। আর যে (এই নির্দেশ পালন করতে) অস্বীকার করবে তার জেনে রাখা উচিত যে আল্লাহ দুনিয়াবাসীদের প্রতি সামান্যও মুখাপেক্ষী নন। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে আল্লাহর জন্য হজ করে এবং তাতে অশালীনতা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকে, সে হজ থেকে নবজাতক শিশুর মতো (নিষ্পাপ হয়ে) ফিরে আসে। (বুখারি, হাদিস : ১৫২১)। অন্য হাদিসে এসেছে, ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা ধারাবাহিকভাবে হজ ও ওমরাহ পালন কোরো, অর্থাৎ সঙ্গে সঙ্গে কোরো। তা এমনভাবে মুমিনের দরিদ্রতা ও পাপ মোচন করে, যেমন (কামারের আগুনের) হাপর লোহা, স্বর্ণ ও রৌপ্যের ময়লা দূর করে। আর কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া কিছুই নয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৮১০)
মূলত যারা হজে যান তারা জিলহজ মাসের প্রথম দশকে বিশেষ ইবাদতে রত থেকে অতিবাহিত করারই চেষ্টা করে থাকেন। তাই দেখা যায় ৮ জিলহজ সকাল থেকেই আকাশ বাতাস মুখরিত করে তালবিয়া পাঠ করতে করতে হাজিগণ মিনার উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। হজরত সহল ইবনে সাআদ (রা) বর্ণনা করেন : মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘একজন হজযাত্রী যখন তালবিয়া পাঠ করে তখন তার আশপাশের পাথর-নুড়ি, পাহাড়-পর্বত, বৃক্ষলতা সবকিছুই সেই তালবিয়া পাঠে শরিক হয়’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)। এর পরের দিন অর্থাৎ জিলহজের নবম তারিখটি আরাফার দিন। সেদিন আরাফার ময়দানে অবস্থান করা হজের সবচেয়ে বড় রোকন। এর মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। মহানবি (সা.) বলেন, আরাফার দিনের মতো অন্য কোনো দিন আল্লাহ অধিক সংখ্যক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন না। সেদিন তিনি দুনিয়ার নিকটবর্তী হয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করে বলেন, দেখ ‘আমার বান্দারা এলোমেলো চুল ও ধূলিধূসরিত শরীরে আমার দরবারে আগমন করেছে। লাব্বাইকা বলে চিৎকার করছে। তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, আমি সবাইকে মাফ করে দিলাম। অন্য হাদিসে এসেছে, শয়তান আরাফার দিন সবচেয়ে বেশি ধিকৃত, অপদস্ত ও ক্রোধান্বিত হয়। কেননা সে তখন আল্লাহর অধিক রহমত এবং বান্দার পাপ মোচন দেখতে পায়’ (মেশকাত)।

কুরবানি করা : জিলহজের ১০, ১১ ও ১২ যেকোনো দিন, কোনো ব্যক্তির মালিকানায় নিত্যপ্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকলে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। সাবালক ও সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী পুরুষ ও নারী—সবার জন্য এ বিধান প্রযোজ্য (ইবনে মাজাহ: ২২৬)।
মহানবী (সা.) সরাসরি কোরবানির ব্যাপারে নির্দেশিত হয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো এবং কোরবানি করো। ’ (সুরা কাউসার, আয়াত : ২)।
আর যাদের ওপর ওয়াজিব হয়নি, তারাও চাইলে সুন্নত হিসেবে কোরবানি করতে পারবে। 
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি পশু কেনার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহ না আসে।


নখ, চুল, দাড়ি ইত্যাদি না কাটা : নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা কোরবানি করবে, তারা যেন (এই ১০ দিন) চুল ও নখ না কাটে।’ (মুসলিম: ৫২৩৩, ইবনে মাজাহ, পৃষ্ঠা: ২২৭)।
এক সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আপনি বলুন, ‘(যদি আমার কোরবানির পশু কেনার সামর্থ্য না থাকে) কিন্তু আমার কাছে এমন উট বা বকরি থাকে, যার দুধ পান করা বা মাল বহন করার জন্য তা প্রতিপালন করি।
আমি কি তা কোরবানি করতে পারি?’ তিনি বললেন, ‘না। বরং তুমি (১০ জিলহজ) তোমার মাথার চুল, নখ, গোঁফ কেটে ফেল এবং নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করো। এ-ই আল্লাহর কাছে তোমার কোরবানি।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, ত্বহাবি, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা: ৩০৫)।
এমনকি এ সময় বাচ্চাদের নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকাও ভালো। অতএব জিলহজ আগমনের আগেই নখ-চুল ইত্যাদি কেটে পরিপাটি হয়ে থাকা বাঞ্ছনীয়।
ঈদুল আজহার নামাজ পড়া : ঈদুল আজহার নামাজ প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন পুরুষের ওপর ওয়াজিব। সূর্যোদয়ের ২০-৩০ মিনিট পর থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাজ পড়া যায়। নবীজি (সা.) ঈদুল আজহার নামাজ সাধারণত সূর্যোদয়ের আধাঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে আদায় করতেন। ঈদুল আজহার নামাজ একটু তাড়াতাড়ি পড়াই উত্তম। তবে প্রয়োজনে কিছুটা বিলম্ব করাও নিষিদ্ধ নয়।

এক থেকে নয় তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা : উম্মে ছালমা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলল্লাহ সা. চারটি কাজ কখনই ছাড়তেন না এক. আশুরার রোজা। দুই. জিলহজ্জ মাসের এক থেকে নয় তারিখে রোজা। তিন. প্রতি আরবি মাসের ১৩ -১৫ তারিখের রোজা। চার. ফজরের দু’রাকাত সুন্নত নামাজ (মুসনাদে আহমেদ)। প্রিয়নবি রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে এ দিনগুলোর আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমল অধিক প্রিয় নয়। সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? উত্তরে প্রিয়নবি বললেন, ‘না’, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে হ্যাঁ যদি কোনো ব্যক্তি নিজের জান ও মাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হন এবং সে কোনো কিছু নিয়ে ফিরে না আসেন (বুখারি)।
জিলহজের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব। এর প্রতিটি রোজা এক বছরের রোজার সমতুল্য। এবং প্রথম ১০ রাতে ইবাদত করা উত্তম। এর প্রতিটি রাত লাইলাতুল কদর সমতুল্য। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জিলহজের ১০ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদতের তুলনায় বেশি প্রিয়। প্রতিটি দিনের রোজা এক বছরের রোজার মতো। আর প্রতি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের মতো। ’ (তিরমিজি : ১/১৫৮)
আরাফাতের দিন অর্থাৎ ৯ জিলহজ নফল রোজা রাখা বিশেষ সুন্নত। তবে আরাফাতে অবস্থানরত হাজি সাহেবদের জন্য এই রোজা প্রযোজ্য নয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে আল্লাহ তাআলা তার (রোজাদারের) বিগত এক বছরের ও সামনের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন’ (তিরমিজি, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা: ১৫৭)।
অতএব যে এলাকায় যখন জিলহজের ৯ তারিখ হবে সে এলাকায় তখন রোজা রাখলে এ ফজিলত লাভ করবে।
পুরো ৯ দিন রোজা রাখা সম্ভব না হলে যত দিন রোজা রাখা সম্ভব তত দিন রাখা যেতে পারে। আর পুরো ১০ রাতে ইবাদত করা সম্ভব না হলে যত রাতে ইবাদত করা সম্ভব তত রাতে ইবাদত করা যেতে পারে। এতেও সাওয়াব পাওয়া যাবে।
আবার ৯ জিলহজ দিবাগত রাতকে (মুজদালিফার রাত) শবে কদরের চেয়েও মর্যাদা সম্পন্ন হিসেবে মনে করা হয়। এ রাতের ইবাদত বন্দেগিতে আল্লাহ তাআলা জুলুমকারীকেও ক্ষমা করে দেন।

জিলহজ মাসের পাঁচদিন তাকবিরে তাশরিক আদায় করা : তাকবিরে তাশরিক হলো-‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ আর তা শুরু হয় ৯ জিলহজ ফজর নামাজের পর থেকে। আর শেষ হবে ১৩ জিলহজ আসার নামাজে। যা এ পাঁচ দিন প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পড়া ওয়াজিব। চাই নামাজ একাকী আদায় করা হোক বা জামাআতে। তাকবিরে তাশরিক পুরুষরা উচ্চ স্বরে আর মহিলার স্বশব্দে পড়বে। অর্থাৎ মহিলাদের তাকবিরের শব্দ যেন (গাইরে মাহরাম) অন্য লোকে না শোনে।

বেশি বেশি জিকির করা : রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, এ দশ দিনের আমলের চেয়ে বেশি প্রিয় আমল আল্লাহর কাছে আর নেই। তাই এ দিনগুলোতে তোমরা তাজবিহ (সুবহানাল্লাহ) তাকবীর (আল্লাহু আকবার) তাহলিল( লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) পড়া বাড়িয়ে দাও।

তাই জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত ফরজ ও সুন্নাত ইবাদতের পাশাপাশি দিনে রোজা পালন, বেশি বেশি নফল ইবাদত যেমন নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার, দান-সাদাকাহ প্রদান ইত্যাদি করে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। মহান রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে ওই দিনগুলোতে বেশি বেশি আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: মোঃ রাকিবুল হাসান

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
Movies
Movies
Movies