নোটিশ

রাকিব মাল্টিমিডিয়ার এই পোস্ট টি আপনার ভালো লাগলে শেয়ার করুন এবং অন্যদেরকে এই ওয়েব সাইট টি ভিজিট করার জন্য অনুরোধ করছি। আপনার যেকোনো অভিযোগ সরাসরি জানাতে কল করুন 01772131866 নাম্বারে। ধন্যবাদ ---মো: রাকিবুল হাসান, স্বত্তাধীকারী, রাকিব মাল্টিমিডিয়া
Movies

বাবার সম্পত্তি থেকে বোনদের বঞ্চিত করলে করণীয়

 

মুসলিম আইনে নারীদের উত্তরাধিকার স্বীকৃত এবং সুনির্দিষ্ট। এ অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হলে তারা আইনানুযায়ী যথাযথ প্রতিকার পেতে পারেন। মুসলিম আইনানুযায়ী বাবা কিংবা মা মারা যাওয়ার পর যদি মৃত ব্যক্তির ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই থাকে, তাহলে তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে ছেলেরা যা পাবেন, মেয়েরা তার অর্ধেক পাবেন। অর্থাৎ ভাইয়েরা ইচ্ছা করলেই বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে বোনের বিয়ে হয়েছে, কী হয় নি, সেটি বিবেচ্য নয়। বোনদেরকে যদি মৃত বাবা বা মায়ের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাহলে বঞ্চিত বোনরা বাটোয়ারা বা বণ্টনের মোকদ্দমা করতে পারেন।

মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির ভাগ-বণ্টন নিয়ে উত্তরাধিকারীদের নিজেদের মধ্যে বনিবনা না হলে- বাটোয়ারা মামলা করে অধিকার ফিরে পাওয়া যায়। এই মোকদ্দমা চলাকালে কেউ মারা গেলে তাদের উত্তরাধিকারীরাও অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন এবং অংশ চাইতে পারেন। অর্থাৎ শুধু বোনরা নন, বোনরা মারা যাওয়ার পর তার উত্তরাধিকারীরাও এই মামলায় পক্ষ হতে পারেন।

তবে ব্যতিক্রম হচ্ছে যে, বাটোয়ারা মামলায় স্বামীগৃহে বসবাসরত বিবাহিত কন্যার ক্ষেত্রে পিতৃগৃহ বা বাসভবনের অংশবিশেষ প্রাপ্তির বিষয়টি বিবেচিত হয় না। কারণ এতে উক্ত সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বিবাদ বা বিরোধ বৃদ্ধি পাবে বলে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে ( ১৩ ডি.এল.আর… পৃষ্ঠা- ২৩০)। তাছাড়া বোনরা বাপের বাড়ির জমি পেলেই সাধারণত তা অন্যের কাছে বিক্রি করে চলে যায়। অন্যদিকে ছেলেদের বাপের গৃহই সম্বল। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় পিতৃগৃহের ভিটেবাড়ির জমি ব্যতীত সমপরিমাণ জমি অন্য জায়গা থেকে দেওয়া হয়। অর্থাৎ বোনের হক তবুও কোনোভাবেই বিনষ্ট করা যাবে না। সেটা যদি ভাইয়েরা বা ভাইপোরা বুঝিয়ে দিতে অস্বীকার করে তাহলে রীতি অনুযায়ী বাটোয়ারা মামলা করে অংশ বুঝে নেওয়া সম্ভব।

বাটোয়ারা মামলা করতে হলে সম্পত্তির মালিকানা সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র, যেমন- ভূমি জরিপ খতিয়ান, নামজারি খতিয়ান, মালিকানা দলিল, উত্তরাধিকার সনদ ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। কারণ নালিশি আর্জিতে সম্পত্তির মালিকানা অর্জনের বিবরণ, যেমন- খরিদ, দান বা ওয়ারিশ সূত্রে কিনা, উত্তরাধিকার সূত্রে কিনা, যৌথ মালিকানার মাধ্যমে কিনা, দখলের পরিপ্রেক্ষিতে স্বত্ব অর্জন কিনা, বন্ধক বা অন্য কোনোভাবে স্বত্ব অর্জন কিনা ইত্যাদি বিষয়সমূহ ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করতে হয়।

এ ছাড়াও বাটোয়ারা মামলা করার আগে নিশ্চিত হতে হবে যে, সম্পত্তি আগে থেকেই উইল বা হেবা করা হয়েছে কিনা। যদি হয়ে থাকে তাহলে উইলের ক্ষেত্রে ১/৩ অংশ বাদ দিয়ে আর হেবা করা হলে হেবার দলিলে যে পরিমাণ মালিকানা আছে সেটা বাদ দিয়ে অন্য শরীকের অংশ বের করতে হবে। এ মামলায় দুবার ডিক্রি হয়।

প্রাথমিক ডিক্রির পর বণ্টন না করা হলে আদালত অ্যাডভোকেট কমিশনার নিয়োগ করে অংশ নির্ধারণ করে দেন এবং চূড়ান্ত ডিক্রি প্রদান করেন। মামলা চলাকালীন আদালতের মাধ্যমে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিরও সুযোগ রয়েছে। বণ্টন ডিক্রি পাওয়ার পরও দখল না পেলে কিংবা পক্ষরা দখল বুঝিয়ে না দিলে অথবা হিস্যা বুঝিয়ে না দিলে ‘উচ্ছেদের মামলা' বা স্বত্ব দখলের মামলা করা যেতে পারে।

বণ্টনযোগ্য সম্পত্তি যে এলাকায় অবস্থিত, সে এলাকার উপযুক্ত আদালতে এ মামলা দাখিল করতে হবে। দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৬ ধারা অনুযায়ী নিম্নতম এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে এ ধরনের মামলা দাখিল করতে হয়। তবে সম্পত্তির মালিক যিনি, তার সম্পত্তি দুটি মৌজায় স্থিত হলে, দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ১৭ বিধি অনুযায়ী যে কোন প্রকার মৌজার এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে মামলাটি দাখিল করা যাবে। যেক্ষেত্রে স্থানীয় অধিক্ষেত্র নির্দিষ্ট না হয়, সেক্ষেত্রে দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৮ বিধি অনুযায়ী যেকোনো আদালতে মোকদ্দমাটি দাখিল করা যাবে।

তাই দেখা যাচ্ছে, সম্পত্তিতে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে নারীদের নিজেদেরকেই সচেতন হতে হবে, যদি না পুরুষরা আন্তরিক হন তাদেরকে নিজ নিজ প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে।

লেখক: আইনজীবী,বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
Movies
Movies
Movies