কেমন বন্ধু জান্নাতে নিয়ে যাবে | সঠিক বন্ধু চেনার উপায়
কেমন বন্ধু জান্নাতে নিয়ে যাবে
আসসালামু আলাইকুম,আজকাল বন্ধু চেনা বড় কঠিন,বন্ধু চিনতে ভুল করার জন্য জীবনে অনে কষ্ট পেতে হয় । আজ আলোচনা করব কীরূপ বন্ধু পেলে আপনি তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন ।
একজন মুমিনের সব কাজই আমল-ইবাদত। কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করাও একজন মুমিনের নাজাতের মাধ্যম হতে পারে। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে কাউকে ভালোবাসল, একমাত্র তাঁর জন্যই কাউকে ঘৃণা করল, তাঁরই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাউকে দান করল এবং তা থেকে বিরত থাকল; তবে নিঃসন্দেহে সে তার নিজ ঈমানকে পূর্ণতা দান করল।’ (আবু দাউদ শরিফ)
বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কবি আল্লামা শেখ সাদি (রহঃ) বিখ্যাত উক্তি দিয়েছেন ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।’ একজন ভালো বন্ধু যেমন মানুষের জীবনের গতি পাল্টে দিতে পারে, তেমনি একজন অসৎ বন্ধুর কারণে জীবন হয়ে যেতে পারে অন্ধকারাচ্ছন্ন। তাই বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলাম প্রদর্শিত নির্দেশ অনুসরণ করতে হবে। এতে একদিকে যেমন নানাবিধ সমস্যা ও ভোগান্তি থেকে বেঁচে থাকা যাবে, অন্যদিকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা. এর পথ অনুসরণ করার সওয়াব পাওয়া যাবে।
সত্যিকারের বন্ধু ও বন্ধুত্ব হজরত আলী (রাঃ) এক কবিতায় বলেন: ‘সেই তোমার সত্যিকারের বন্ধু যে তোমার সঙ্গে থাকে, তোমার কল্যাণের জন্য নিজের ক্ষতি করে। দুর্ঘটনাবশত তোমার অবস্থা শোচনীয় হলে সে নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে তোমাকে সুখ দান করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বন্ধু অবশ্যই বানাও। কারণ বন্ধু দুনিয়াতেও উপকারে আসে এবং আখেরাতেও।’
হজরত ইমাম জাফর সাদেক (রহঃ) বলেন: ‘পাঁচ ব্যক্তির সঙ্গ অবলম্বন করো না। মিথ্যাবাদী, নির্বোধ, কৃপণ, কাপুরুষ ও ফাসেক ব্যক্তি।’
বন্ধুত্ব তৈরি মানুষের স্বভাবজাত প্রবণতা। তাই বন্ধুত্বের ব্যাপারে ইসলামে যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। বন্ধু তো বানাতে হবে তাই বলে তো যাকে তাকে বন্ধু বানানো যায় না। কারণ, জীবনে বন্ধুর প্ৰভাব পড়ে। একজন ভালো বন্ধু একজন খারাপ মানুষকে ভালো বানাতে সাহায্য করতে পারে পক্ষান্তরে খারাপ বন্ধু একজন ভালো মানুষকে নিয়ে যেতে পারে অধঃপতনের অতল গবহরে।
পবিত্র কুরআন-হাদিসের দিক-নির্দেশনা: কুরআন ও হাদিসে বন্ধু নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা রয়েছে; সূরা তাওবায় আল্লাহ বলেন: ‘আর মহান হজের দিনে আল্লাহ ও তার রাসূলের পক্ষ থেকে লোকদের প্রতি ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ মুশরিকদের থেকে দায়িত্বমুক্ত এবং তার রাসুলও।’
সুতরাং, প্রতিটি মুমিনের ওপর আবশ্যক হল ইসলাম বিরোধীদের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করা। কেননা, তিনি আরো বলেন: ‘হে মুমিনরা! তোমরা ইয়াহুদী ও নাসারাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পরে বন্ধু।’
এ প্রসঙ্গে মহানবী সা. বলেছেন: ‘সৎসঙ্গ ও অসৎসঙ্গের উপমা হল- সুগন্ধের বাহক ও হাঁপর ব্যবহারকারী কামার। একজন সুগন্ধের বাহক হয়তো তোমাকে সুগন্ধি প্রদান করবে অথবা তার থেকে কিছু সুগন্ধি ক্রয় করবে। একজন কামারের হাঁপরে হয়ত তোমার পোশাক ছিঁড়ে যাবে এবং তুমি দুর্গন্ধ পাবে।’
আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত: ‘যে ব্যক্তি চিন্তা ভাবনা করে যথাযথ বিচার বিশ্লেষণ করে বন্ধু নির্বাচন করবে, তাদের বন্ধুত্ব বজায় থাকবে এবং তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর হবে।’ হঠাৎ করে কারো সাথে পরিচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে অর্থাৎ কোনো রকম বিচার বিশ্লেষণ ছাড়া বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে অনেক সময় দুঃখজনক পরিণতি ঘটতে পারে। বন্ধু এমন একটি সম্পর্ক যা নির্বাচন করে হয় না। যাকে মন থেকে পছন্দ হয় তারাই হয় একজন আর একজনের পরম বন্ধু। কিন্তু যদিও বন্ধু নির্বাচন করে হয়না তারপরও এর প্রভাব কিন্তু নির্বাচিত। একজন বন্ধুর প্রভাবে একজন মানুষ নিজেকে তার প্রতিচ্ছবি হিসেবেও দেখতে পছন্দ করে। হাজারো উপমা এমন রয়েছে যে, মানুষ বন্ধুর জন্য নিজের জীবনকেও বাজি রাখতে দ্বিধা করে না।