সব সময় মন ভালো রাখার ইসলামী কৌশল
সব সময় মন ভালো রাখার ইসলামী কৌশল
মন ঠিক থাকলে শরীরও ঠিক থাকে। সুস্থ থাকতে হলে মনকে চাপমুক্ত রাখা খুব জরুরি। কিভাবে মনকে চাপমুক্ত রেখে, সবসময়ই মন ভালো রাখা যায় এবং হাসিখুশি থাকা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করব । তো চলুন শুরু করি ।
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বলেছেন,
أَلاَ وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ. أَلاَ وَهِيَ الْقَلْبُ ”
জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল ক্বলব (অন্তর)।
(বুখারী,হা-৫২)
মানুষের মন বা অন্তর ভালো থাকলে সমস্ত শরীর ঠিক থাকে, কাজকর্মে মনোযোগী হওয়া যায়, সবকিছুই ভালো লাগে কিন্তু মন বা অন্তর যদি খারাপ হয়ে যায় তাহলে সমস্ত শরীর খারাপ হয়ে যায়, যার ফলে কাজকর্মে মন বসেনা, পড়াশোনা করতে ভালো লাগেনা, সবসময় দুশ্চিন্তা মাথার মধ্যে ঘোরাফেরা করে ইত্যাদি বহু সমস্যা শরীরের মধ্যে বাসা বাঁধে ।
এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু ইসলামিক কৌশল আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব, এগুলো ফলো করলে হাজার দুঃখ,কষ্টের মধ্যেও সব সময় মন ভালো থাকবে- ইনশাআল্লাহ
(১) সৎসঙ্গ লাভ করা।
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআন শরীফের মধ্যে বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হয়ে যাও।
(সূরা আত তাওবাহ:১১৯)
সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে হলে, সৎসঙ্গ লাভ করা অত্যন্ত জরুরি ।
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে,
সৎ সঙ্গ স্বর্গবাস,
অসৎ সঙ্গ সর্বনাশ।
যদি সৎ মানুষদের সংস্পর্শে থাকা যায়, তাহলে দুনিয়া ও আখেরাতে লাভবান হওয়া যাবে , তাদের কাছ থেকে পাওয়া উপদেশ জীবনে চলার পথে অনেক কাজে আসবে। আর অসৎ ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকলে, বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে, অসৎ ব্যক্তি কিছু অন্যায় করলে তার সঙ্গে থাকার ফলে নিজেকেও সেই দোষে দোষী হতে হবে,এর ফলে পরিবারের সম্মান নষ্ট হবে,দুশ্চিন্তা বাড়বে । তাই অসৎ সঙ্গ ছাড়তে হবে। আর জীবনে হাসিখুশি থাকতে হলে অবশ্যই সৎসঙ্গ লাভ করতে হবে ।
(২) আল্লাহকে স্মরণ করা।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন,
الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللَّهِ-أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ.
যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর কে শান্ত রাখে। জেনে রাখ আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায় ।
(সূরা রা’দ ২৮)
পবিত্র কোরআনের আয়াত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা গেল যে, আল্লাহর জিকির দ্বারা মন বা হৃদয় বা অন্তরকে শান্ত রাখা যায় ।
(৩) ভাগ্য শিকার করা।
ভাগ্যের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে,ভাগ্য ভালো হোক অথবা খারাপ । মানুষ কর্ম করবে সেই অনুযায়ী ভাগ্য তে যা থাকবে সেটাই সে লাভ করবে । এই পরিস্থিতিতে ভালো কিছু লাভ করলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে, খারাপ কিছু লাভ করলে তবুও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে এবং ধৈর্য ধারণ করতে হবে । জীবনে চলার পথে কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে বা জীবনে কোনো বিপদ নেমে আসলে, ধৈর্য ধারণ করে,ভাবতে হবে যে এটা আমার ভাগ্যে ছিল, যার ফলে এমন হয়েছে । ভাগ্যের ওপর সঠিক বিশ্বাস রাখতে পারলে মনের বোঝা হালকা হয়ে যাবে।
(৪) আল্লাহর উপর ভরসা রাখা।
আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা রাখা ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য। ঈমানদার ব্যক্তি সর্বদাই এমনকি দুঃখ-কষ্টে পতিত হলেও আল্লাহর উপরই ভরসা রাখে কোন প্রকার দুশ্চিন্তা করে না ।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন মাজিদে বলেন,
فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
“নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে”।
(সূরা আল ইনশিরাহ ৫)
অর্থাৎ দুঃখ,কষ্ট যেমনই হোক না কেন, তারপর স্বস্তি বা সুখ শান্তি রয়েছে ।
দুঃখ-কষ্টের সময় এই কথা স্মরণ করতে হবে যে, দুঃখ কষ্ট চিরস্থায়ী নয় ক্ষণস্থায়ী এমন দুঃখ কষ্ট সবার জীবনই এসে থাকে এর জন্য দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই। প্রত্যেক রাতের শেষে অবশ্যই ভোর রয়েছে ।
বিশ্বাসী মানুষদের জন্য এতোটুকু চিন্তা, কঠিন দুঃখ-কষ্ট ও বিপদের মোকাবিলা করতে, ঢালের মত সাহায্য করবে ।
(৫) আত্মীয়তার সম্পর্ক দৃঢ় করা।
আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা মাথায় এসে বসে, মাঝে মাঝে বিতর্ক, ঝগড়া ঝামেলা ইত্যাদি হয়ে থাকলে মন কোনোভাবেই হাসি খুশিতে থাকতে পারেনা ।
তাই আত্মীয়তার সম্পর্ক মজবুত করতে হবে, আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলে,লেনদেন থাকলে অনেক হাসিখুশি থাকা যায় । এজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আত্মীয়তার সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন ।
(৬) হিংসা ও অহংকার মুক্ত হওয়া।
হিংসা ও অহংকার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে । যেমন ভাবে আগুন কাট পুড়িয়ে দেয় তেমনি ভাবে হিংসা জ্ঞান ও বুদ্ধি নষ্ট করে দেয়, এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে দেয় । আর অহংকার অন্তরে পর্দা ফেলে দেয় । আল্লাহ তাআলা অহংকারীকে পছন্দ করেন না । হিংসা ও অহংকার যার মধ্যে থাকবে সে কখনোই হাসিখুশি থাকতে পারবে না । হাসিখুশি থাকতে হলে অবশ্যই হিংসা ও অহংকার থেকে দূরে থাকতে হবে ।
(৭) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা।
মন ভালো রাখতে ও দুশ্চিন্তা দূর করতে, হাসিখুশি থাকতে নামাজের কোন বিকল্প নেই । পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত আদায় করলে শরীর ও মন উভয়ই ভালো থাকে ।
(৮) অসহায় মানুষকে সাহায্য করা ।
কৃপণ ব্যক্তির জীবনে অনেক কষ্ট, তাদের মনের শান্তি নেই, তারা শুধু কত টাকা আছে কত সম্পদ আছে গুনে গুনে দিন কাটাই, কারো বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় না। কৃপণ ব্যক্তির শাস্তি কেয়ামতের দিন ভয়াবহ হবে । এরা পৃথিবীতে বিভিন্ন দুশ্চিন্তার মধ্যে জীবন যাপন, মনে প্রাণে শান্তি থাকে না,কৃপণ হওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অপমানও হয়ে থাকে । প্রিয় দর্শক অসহায় মানুষকে সাহায্য করলে, গরীব দুঃখীকে দান করলে, ভেতর থেকে অনেক শান্তি লাভ করা যায় । মানুষকে দান করলে মানুষের বিপদে সাহায্য করলে, পৃথিবীতে ভালো থাকা যায় আখেরাতেও এর মূল্য পাওয়া যায়।
এই ৮ কৌশল যদি জীবনে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে ইনশাআল্লাহ সব সময় হাসিখুশি থাকা যাবে ।